ডেট্রয়েট শহরের কেন্দ্রস্থলে বার্ষিক আতশবাজি প্রদর্শনী/David Guralnick, The Detroit News
ডেট্রয়েট, ২৩ জুন : প্রচণ্ড গ্রীষ্মের রেকর্ড তাপমাত্রাও থামাতে পারেনি উৎসাহী জনতাকে। সোমবার সন্ধ্যায় ডেট্রয়েট নদীতীরবর্তী অঞ্চলে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিল ৬৭তম ফোর্ড ফায়ারওয়ার্কস শো উপভোগ করতে। রাত ঠিক ১০টার পরেই আকাশজুড়ে রঙের আতশবাজির বর্ণিল বিস্ফোরণে আলোকিত হয়ে ওঠে শহর।
অনুষ্ঠানটি বহু মানুষের কাছে একবারেই ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে, আবার অনেকেই এই প্রথমবারের মতো পরিবারের সদস্যদের নিয়ে উপভোগ করেছেন অনুষ্ঠানটি। প্যারেড কোম্পানির সভাপতি এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টনি মাইকেলস বলেন, "প্রতি বছর আমি বলি, এটি আরও বড় এবং আরও ভালো হবে, এবং আমরা তা করে দেখাচ্ছি। এ বছর আমরা ২৪ মিনিটের মধ্যে আগের চেয়ে আরও বেশি আতশবাজি প্রদর্শন করেছি।"
৪৯ বছর বয়সী বেটি মার্টিন, যিনি বর্তমানে সাউথফিল্ডে বাস করেন, দীর্ঘদিন পর শো দেখতে এসেছেন। তার কন্যা সোফি এবং গ্যাব্রিয়েলের জন্য এটি ছিল প্রথম অভিজ্ঞতা। তিনি বলেন, "ডেট্রয়েট ফায়ারওয়ার্কস শো-এর মতো কিছু নেই। শহরটি যেভাবে ফিরে এসেছে, এবং যেভাবে এটি উদযাপন করছে, আমি তা ভালোবাসি।"
এই প্রদর্শনী মেট্রো ডেট্রয়েট ও আশপাশের এলাকা থেকে বহু দর্শককে আকৃষ্ট করে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ইউএসএ টুডে পাঠকদের জরিপে এই শো টানা দ্বিতীয় বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় সেরা আতশবাজি প্রদর্শনীর স্বীকৃতি পেয়েছে।
তবে এবারের শোটি সম্ভবত সর্বাধিক স্মরণীয় হয়ে থাকবে তার অস্বাভাবিক তাপমাত্রার কারণে। সোমবার বিকেলে ডেট্রয়েট মেট্রো বিমানবন্দরে তাপমাত্রা ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটে পৌঁছায়, যা ১৯২৩ সালের রেকর্ড স্পর্শ করে।
ক্লিনটন টাউনশিপের ৩১ বছর বয়সী জুয়ান পান্ডাগাস, যিনি দুই বছর আগে মিশিগানে এসেছেন, বলেন: "আমরা প্রায় দুই গ্যালন পানি এনেছি, যতটা সম্ভব হাইড্রেটেড থাকার চেষ্টা করছি। ছায়া অনেকটা সাহায্য করেছে আমাদের।" সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি হার্ট প্লাজার ঠিক বাইরে একটি ছায়াময় স্থানে অবস্থান নেন। তাদের জন্য এটি ছিল এই দর্শনীয় অনুষ্ঠানের প্রথম অভিজ্ঞতা।
প্রতি বছরের মতো এবারও ডেট্রয়েট নদীর তীরে আয়োজন করা হয় বহু প্রতীক্ষিত ফোর্ড ফায়ারওয়ার্কস অনুষ্ঠান। রাত ১০টার ঠিক পরেই আকাশজুড়ে রঙের বিস্ফোরণ শুরু হলেও, দর্শকদের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় তার বহু আগে। কেউ কেউ এসেছিলেন লাল, সাদা ও নীল পোশাকে, চতুর্থ জুলাইয়ের দেশাত্মবোধক রঙে নিজেদের রাঙিয়ে।
হার্ট প্লাজা এবং বেল আইল দুপুর ২টায় দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত হলেও, মানুষের ঢল এতটাই ছিল যে নির্দিষ্ট ধারণক্ষমতা পূর্ণ হতেই প্রবেশ বন্ধ করতে হয়। ভীড়, গরম এবং উত্তেজনার মাঝেও ডেট্রয়েটের মানুষের কাছে এই অনুষ্ঠান যেন এক স্বস্তির নিঃশ্বাস।
৫৩ বছর বয়সী ওমের চাইল্ডস, যিনি বর্তমানে রেডফোর্ডে থাকেন, বলেন— “এটি কেবল একটি আবেগ। আমি এই এলাকায় বসে থাকতে ভালোবাসি। এখানে ব্যান্ড বাজে, দারুণ সঙ্গীত হয়। আমাদের সবসময় ভালো সময় কাটে এবং বিভিন্ন ধরণের মানুষ দেখার সুযোগ হয়।”
চাইল্ডসের মতে, তিনি এমন গরম আগে খুব কমই দেখেছেন। "হয়তো ৯০-এর দশকে এরকম একটা সময় ছিল। তবে আমরা জানি কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়, আমাদের ছাতা, গলার ফ্যান, ব্যাটারি চার্জার, পানি সবকিছু সঙ্গে থাকে।"
তেমনি স্মৃতিচারণ করছিলেন সাউথফিল্ডের বাসিন্দা মার্টিন, যিনি ছোটবেলাতেই এই ফায়ারওয়ার্কস দেখতে শুরু করেন। তিনি বলেন, “৮০-এর দশকে আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন হার্ট প্লাজায় কম্বল বিছিয়ে বসতাম। কিন্তু সিমেন্ট এতটাই গরম হয়ে যেত যে উঠে দাঁড়াতে হতো। বাতাস ছিল না, ফলে শো শেষ হলে আমরা স্বস্তি পেতাম।”
বাচ্চারা শোর আগে হোরেস ই. ডজ অ্যান্ড সন মেমোরিয়াল ফাউন্টেন-এ জল নিয়ে খেলছিল, কেউ কেউ আবার আগেভাগেই ছায়াময় জায়গা দখল করে বসে পড়ে। গরমের মধ্যেও মানুষের অংশগ্রহণ ছিল বিপুল যা প্রমাণ করে যে ঐতিহ্য, আবেগ এবং পারস্পরিক আনন্দের কোনো বিকল্প নেই।
মঙ্গলবার পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব মিশিগানে তাপমাত্রা ৯০ ডিগ্রির ঘরে থাকার পূর্বাভাস রয়েছে এবং চরম তাপ সতর্কতা জারি থাকবে রাত ৮টা পর্যন্ত।
Source & Photo: http://detroitnews.com
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan